লাল পিঁপড়া বনাম কালো পিঁপড়া

গর্ব (অক্টোবর ২০১১)

মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
  • ১৪
  • 0
  • ৮৮
প্রকন্ড একটি আম, বিশাল ডাল-পালা ও শাখা-প্রশাখা বিস্তিত বয়সও কম হবে না প্রায় একশ বছরের কাছাকাছি । গাছটির বাম পাশে একটি নালা ও রয়েছে এছাড়া আসে পাশের দশ বর্গগজ জুড়ে অন্য কোন গাছ নেই, গাছটির আকৃতি তাবুর মত । রাতের বেলা দূর থেকে দেখলে মনে হয় বিশাল এক মূকুট ধারি দৈত্য । গাঁয়ে গত্রে বিশাল হলেও ফলনের বেলায় এর বিশালত্বের কানাকড়িও দেখা যায় না, হয়তো গাছটির যৌবন কালে প্রচুর আমের ফলন হতো এখন বুড়ি হয়েগেছে তাই আমের ফলন ও কমে গেছে । গাছটিতে প্রচুর পিঁপড়ার বসবাস তবে দুই ধরণের লাল পিঁপড়া ও কালো পিঁপড়া, কালো পিঁপড়া গুলো লাল পিপড়াদের থেকে আকারে একটু বড় । লাল পিপড়ারা ছত্রাক, গাছের মৃত বাকল, ফলও ফুলের মুকুল খেতে অভ্যস্ত এবং শীতের জন্য তারা এ গুলোই সারা বছর ধরে রিজার্ভ করে । অপর দিকে কালো পিঁপড়া গুলো মাংসাশী বনের মৃত জীব-জন্তুই তাদের প্রিয় খাবার ।
গাছের বাম দিকে উপর নীচ দুইটি ডালে কালো পিঁপড়া ও লাল পিপড়ার বাড়ি । অপেক্ষাকৃত উপড়ের ডালে লাল পিপড়ার দল ও নিচের ডালে কালো পিপড়ার বাসা । কালো পিপড়াদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যতেষ্ট উন্নত মানের তাদের কামড়ে অতি ঘনমাত্রার ফরমিক এসিড নির্গত হয়। অপর দিকে লাল পিঁপড়া দের কামড় নিম্ন মাত্রার ফরমিক এসিড যুক্ত । লাল পিঁপড়া ও কালো পিঁপড়া কলোনি অনেক দিন ধরে পাশা পাশি বসবাস করতেছে, মাঝে মাঝে তাদের মধ্য হলকা ঝগড়া বা দস্তা-দস্তি হয় তবে তা বড় সংঘর্ষে কখনো রূপ নেয় না । তাছড়া লাল পিঁপড়া কালো পিপড়াদের উপর অনেক ঋনী, অনেক অনেক দিন আগে লাল পিপড়ারা ঘাস ফড়িং দের দ্বারা শোষিত হতো একবার লাল পিপড়ারা বিদ্রোহ করলো আর তখন শুরু হয়েছিলো তুমুল যুদ্ধ, কালো পিপড়াদের সহযোগীতায় শেষ পর্যন্ত লাল পিপড়ারা ঘাস ফড়িঙদের অত্যাচার হতে মুক্ত হয় । সেই থেকে লাল পিঁপড়া রানী কালো পিঁপড়া রানীর নিকট চির কৃতজ্ঞ । কালোরা চায় যেহেতু লালরা ছোট ও কম শক্তিশালী তাই তারা তাদের কথামত চলবে, কিন্তু সাধারণ লাল পিপড়ারা এর চরম বিরোধী । লাল পিপড়াদের ডালের এক পাশে এক জোড়া বুনো সাদা পায়রার বসবাস । সাধারণ লাল পিপড়ারা এই পায়রা দম্প্রতির সাথে শখ্যতা চায় কিন্তু রাণী তাতে বেশী আগ্রহী নয় কারণ কালোরা তা অপছন্দ করে । এই নিয়ে রাণীর প্রতি সাধারণ পিপড়াদের প্রচন্ড ক্ষোভ রয়েছে কিন্তু রাণী এতে কোন পাত্তা দেন না । যেহেতু কালো পিঁপড়া গুলো মাংসাশী তাই পায়রাগুলো তাঁর ডিমের নিরাপত্তা নিয়ে চিহ্নিত থাকে । একজন্য কালো পিপড়াদের সাথে পায়রাদের তিক্ত সম্পর্ক বিদ্যমান এমনকি পুরুষ পায়রাটি একবার কালোদের গুড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু তাদের কামড়ে উল্টো তাকে আহত হয়ে দুই দিন বিছানায় থাকতে হয়েছিলো । এদিকে কালো পিপড়ারা সর্বদা পায়রার আক্রমণের ভয়ে ভীষণ আতঙ্কগ্রস্থ থাকে । পায়রা দম্প্রতি অনেক দিন ধরে গাছটিতে বাড়ি বানিয়ে বসবাস করে আসতেছে, তাদের খুবই সূখের সংসার, কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে স্ত্রী পায়রাটি কোন ডিম দিতে পারতেছে না, এই নিয়ে পায়রা দম্প্রতির খুবই দুঃখ ।

অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর স্ত্রী পায়রাটি এক জুড়া ডিম পাড়লো, তখন তাদের আনন্দের শেষ নেই।লাল পিঁপড়ারা পায়রা জুটির এই আনন্দে খুবই আনন্দিত হলও । অপরদিকে এই খবরে কালো পিঁপড়ারা চরম আতঙ্কিত হল তাদের ভয় এতে পায়রা দের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে আর সেই সাথে তাদের বাসস্থান গুঁড়িয়ে দেওয়ার ও সম্ভবনা বৃদ্ধি পাবে । তাই কালো পিঁপড়া ড়াণী তাঁর কলোনির নেত্রীস্থানীয় পিঁপড়াদের নিয়ে একটি বৈঠকে মিলিত হলেন । অতি গোপনে ড়ানীর খাস কামরায় বৈঠক শুরু হল। ড়াণী তাঁর উদ্বেগের কথা পিঁপড়াদের জানালেন এবং এ সম্পর্কে কি করনীয় তাঁর জন্য পরার্মশ চাইলেন,
অনেক ক্ষণপর সভাস্থলের নিরবতা ভেঙ্গে একজন পিঁপড়া বলল মহামান্য ড়ানী আমাদের পায়রার ডিম ধ্বংস করা ছাড়া বিকল্প কোন রাস্তা খোলা নেই, পায়রা জোড়া যখন বাইরে থাকবে তখন আমরাদের কম্যান্ড বাহীনি পায়রার ডিম ধ্বংস করে দিয়ে আসবে । ড়ানী খুব বিচলিত ভাবে জবাব দিলেন কিন্তু এত ঘুর্ন পথে উপরের ডালে যেথে আসতেই তো পায়রা এসে যাবে । সভাস্থলে আবারো পিন পতন নিরবতা চলে এলো
অনেক ক্ষণ পর এক অবসর প্রাপ্ত সেনাপতি ড়াণীকে উদ্দেশ্য করে বলল, মহাড়াণী আমার মাথায় একটি প্লান এসেছে আপনি অনুমতি দিলে বলতে পারি, ড়াণী বিরক্ত হয়ে বললেন অনুমতির দরকার কি তাড়া-তাড়ি বল ।
পিপড়ারা সবাই বুড়ো সাবেক সেনাপতির এত সুন্দর প্লাণ শোনে খুবই প্রসংশা করলো । বুড়ো সেনাপতির কথামত ড়ানী লাল পিঁপড়া রানীর নিকট প্রস্থাব পাঠালেন, লাল পিঁপড়া রানীকে এর জন্য নানা সুবিধা দেওয়ার কথা ও ঘোষণা দেওয়া হল । লাল পিঁপড়া রানী নিজেদের মধ্যে কোন আলাপ আলোচনার প্রয়োজনবোধ না করেই কালো ড়ানীর কথায় সায় দিলেন ।
হঠাত করে লাল-কালো পিপড়ার যৌথ পরি চালানায় দুই কোলনী বরাবর নতুন রাস্তা নির্মাণ শুরু হল, এতে সাধারণ লাল পিপড়ারা খুবই আশ্চুর্‍্য হলো তারা বুঝতে পারলো না দুই কলোনির বাড়ির দরজা বরাবর রাস্তার দরকার কি, রাস্তা তো একটি এমনিতেই আছে । লাল পিপড়ার একটি দল সাথে সাথে রানীর নিকট কৈফিয়ত চাইলো, মহামান্য রানী এই নতুন রাস্তা তৈরীর অনুমতি আপনি দিয়েছেন!
রানী হেসে হেসে জবাব দিলেন, হ্যা আমাদের দুই কলোনির সম্পর্ক আরো বন্ধুত্ব পূর্ণ করতে আমি ও কালো ড়ানী এই সিদান্ত নিয়েছি । লালরা বলল কিন্তু রানী আপনি এত বড় একটি সিদ্ধান্ত আমাদের কারো সাথে আলোচনা না করেই নিয়ে ফেললেন ।
রাণী খুবই রাগন্ত্বিত হয়ে বললেন, আমি এই কোলোনির রানী, কোলোনির কল্যাণে যে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আমার আছে ।
একজন যুবক পিঁপড়া বলে উঠলো, কিন্তু মহামান্যরানী এতে পায়রা দম্প্রতি নাখোশ হবে, তাছাড়া পায়রাদের ঘরে নতুন ডিম এসেছে আর আমার মনে হয় এই ডিম নিয়ে কালোদের কোন ষড়যন্ত্র আছে ।
রাণী হুংকার দিয়ে বললেন, এই ছোকরা তুমি কি আমার চেয়ে বেশী বুঝো? ।আমি একটি বিষয় লক্ষ করেছি, কালোদের সাথে আমি যখনই ভাল সম্পর্ক গড়তে চাই তখনই তোমরা এসে এতে বাধা দাও ।
আমি একটি কথা স্পষ্ট বলে দিচ্ছি এই রাস্তা নির্মানে কেউ বাধা দিলে থাকে কারাগারে যেতে হবে ।
খুবই হতাশ হয়ে লাল পিপড়ার এই দলটি যে যার ঘরে চলে গেল ।
এদিকে পায়রা দম্প্রতি নতুন এই রাস্তা দেখে, খুবই আতঙ্কিত হলো, ডিমের নিরাপত্তায় নিয়ে তারা আরো চিন্তিত হয়ে গেল । তাই তারা কখনো ডিম একা রেখে বাইরে যায় না, পালা ক্রমে দুইজন ডিম পাহারা দেয় ।
এদিকে নতুন রাস্তার ফলে দুই কলোনির মাঝে উষ্ণ সম্পর্ক তৈরী হয়েছে, বিনা বাধায় তাদের মধ্যে অবাধ যাতায়াত চালু হয়েছে । কিন্তু বিশেষজ্ঞ লাল পিপড়ারা সারাক্ষণ আতঙ্কে দিন কাটান । আর এভাবে পিঁপড়া কলোনি দ্বয়ের দিন কাল ভালই চলছিলো ।

পুরুষ পায়রাদের কড়া নির্দেশ কোন অবস্থাতেই ডিম একা রেখে বাইরে যাওয়া যাবে না । তাই স্ত্রী পায়রাটি সারক্ষন বাড়িতে একা থাকে আর তাঁর ভীষণ রাগ হয় পিঁপড়াদের ঐ নতুন রাস্তার প্রতি । একদিন স্ত্রী পায়রাটি দেখলো দূরে কি যেন শস্য দানার মত দেখা যাচ্ছে । স্ত্রী পায়রাটির খাবারের প্রতি লোভ হল কিন্তু ডিম ছেড়েতো যাওয়া যাবে না । হঠাত তাঁর মাথায় একটি বুদ্ধি হল , সাথে আথে প্রচন্ড বেগে উড়ে সে রাস্তাটির সংযোগে নখদ্বারা আগাত করলো, সাথে সাথে অসংখ্য লাল পিঁপড়া নালাতে পড়ে প্রাণ হারালো এবং পায়রার ধারালো নখের আঘাতে লাল পিপড়ার ছোট বাড়িটীর একঅংশ মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হল ।
কিন্তু আশ্চুর্য্যের বিষয় কালো পিপড়ারা এতে কোন প্রতিরোধ করলো না । এর প্রতিক্রিয়ায় প্রচন্ড বিক্ষোভের মধ্যদিয়ে লাল পিঁপড়া রানী ক্ষমতাচ্যুত হলেন ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মুহাম্মাদ মিজানুর রহমান হ্যা, সবার মতামত পড়লাম, এবং আমিও বাকি পাঠকদের সাথে একমত হয়ে বলতে চাই যে পায়রা রুপকটা ভালো হলো না.....বাকি মেসেজ পেয়ে গেছি.....
আহমাদ মুকুল ম্যাসেজটা ধরা গেছে, কিন্তু পায়রা রূপকটির ব্যবহার যথাযথ মনে হল না। একটু গোছালো হলে দারুন এক গল্প হত।
খন্দকার নাহিদ হোসেন গল্প বেশ। তবে শেষটা আর একটু গোছান যেতো। তবে গল্পকারের বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করতেই হয়। ও বানানটা জ্বালাল।
সূর্য মতবাদ ভিন্ন হতেই পারে, সবার দেখার দৃষ্টিও আলাদা। যেমন ইইউ (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) হওয়াতে ইউরোপের অনেক ক্ষুদ্র রাষ্ট্র লাভবান হয়েছে। সিকিম নিজেরা গণভোট করে ভারতের সাথে মিলে গেছে। ভারত বিরোধীতা আমাদের বিলাসীতায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ভারতীয় খাবার খাওয়া, সারদিন ভারতীয় চ্যানেল দেখা, ভারতীয় কাপড় পড়া অথবা চিকিৎসার যে কোন ব্যাপারে ভারতে দৌড়াতে আমাদের ইগোতে লাগেনা। কিন্তু ক্ষমতালোভীদের "ভারত" রাজনীতিতে আমরা ঠিকই জড়িয়ে যাই। (আমি কারো পক্ষে সাফাই বা বিরোধীতা করছিনা, শুধূ ব্যক্তিগত মত) *****গল্প ভাল হয়েছে যদিও সাদা পায়রাকে দ্বন্ধ লাগানোর ব্যপারে ব্যবহার ভাল লাগেনি।
প্রজাপতি মন অনেক অনেক ভালো লাগলো, মনে হলো যেন শেষ হইয়াও হইলোনা শেষ । কাহিনী আর একটু বিস্তৃত করা গেলে ভালো লাগাটা আরও বেশী হতো।
sakil চমৎকার সাসপেন্স তৈরি করেছেন... পড়তে পড়তে ভাবছিলাম- দুই রানীকে দিয়ে বিশেষ কোন ব্যাক্তিকে ইঙ্গিত করেছেন কিনা! ভাবছিলাম গল্পের শেষে এসে মূল মেসেজটা পাব... কিন্তু হতাশ হতে হল... শেষের মনে হ্য় আরো কিছু কাজ করার অবকাশ ছিল। - সহমত .
আশা আপনি কেগো ভাই ? খুব ভালোই ত লেখলেন। (কবুতর আর কবুতরের ডিম কি তাহলে দেশের জঙ্গীবাদি গোষ্ঠি?)। আমি যেন তারই ইঙ্গিত পেলাম। (ধারণা ভুলও হতে পারে)।
পন্ডিত মাহী ভালই চলছিল ... শেষে এসে হতাশ হলাম ... আরো কিছু আশা করছিলাম
মামুন ম. আজিজ ঈশপের গল্পের মত যেন। বেশ লাগল। শেষে পাঠকের চিন্তার সূত্র খুলে গেল।
Lutful Bari Panna রাস্তা প্রসঙ্গ আসতেই বিষয়টা পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল। নয়ত এটাকে রূপকথা বলেই ভেবে নিতাম। আপনি অনেক ভাল লেখেন...

২৪ সেপ্টেম্বর - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪